আকসা নিয়ে ইসরাইল ও জর্দানের মধ্যে সম্পাদিত এক গোপন চুক্তি

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ সম্প্রতি ইসরাইলের হিয়ুম পত্রিকা ইসরাইল ও জর্দানের মধ্যে সম্পাদিত এক চুক্তির কথা প্রকাশ করে। চুক্তিতে ইসরাইল ও আমেরিকার পক্ষ থেকে জর্দানকে মসজিদে আকসায় ইসরাইলের ক্রমবর্ধমান প্রবেশে মৌন সম্মতির বিনিময়ে কুদসের পবিত্র স্থানগুলোতে দুঃখনজকভাবে সৌদি আরবকে তত্ত্বাবধান করতে না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

ইসরাইলে সর্বাধিক প্রচারিত হিয়ুম পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, মূলত জর্দানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ ইসরাইলকে ট্রাম্প প্রশাসনে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানান, যাতে জর্দানের কাছ থেকে বাইতুল মোকাদ্দাসের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব কেড়ে নিয়ে সৌদিকে দেওয়া না হয়।

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ পত্রিকাটি বলে, প্রথমত বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ ইসরাইলকে ১৯৯৪ সালে সম্পাদিত ইসরাইল-জর্দান শান্তিচুক্তির প্রতি সম্মান জানানোর আহ্বান জানান, যে চুক্তিবলে জর্দান আকসার পবিত্র স্থানগুলোর তত্ত্বাবধানের অধিকার পায়। কিন্তু ইসরাইল থেকে সন্তোষজনক সাড়া না পাওয়ায় জর্দান ওয়াশিংটনের হস্তক্ষেপ দাবি করে। বাদশাহ আবদুল্লাহ ইসরাইল ও আমেরিকা থেকে এ মর্মে লিখিত প্রতিশ্রুতি চাচ্ছিলেন যেন পবিত্র স্থানের তত্ত্বাবধানের যে অধিকার জর্দানের রয়েছে, তাতে কোনো হস্তক্ষেপ করা না হয়। কিন্তু এক্ষেত্রেও জর্দানকে হতাশ হতে হয়।

প্রতিবেদক নাদাফ শারগাই বলেন, পরে ইসরাইল তার বিভিন্ন স্বার্থের কথা বিবেচনা করে ট্রাম্পকে রাজি করানোর চেষ্টা করে, যাতে তিনি বাদশাহ আবদুল্লাহকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন। ইসরাইল মনে করে জর্দানের সরকার ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে এবং জর্দান আঞ্চলিক ও নিরাপত্তা উভয় ক্ষেত্রে ইসরাইলের জন্য কৌশলগত ভা-ার। তাছাড়া জর্দান ইসরাইলকে যে ধরনের সহযোগিতা করছে, সেটা এ অঞ্চলে আমেরিকার স্বার্থই রক্ষা করছে।
পত্রিকার মতে, তেলআবিব ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনায় এটাও ইঙ্গিত করে, বাইতুল মোকাদ্দাসে জর্দানের ভূমিকা ইসরাইলকে সেখানকার বিভিন্ন চালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতা করছে। তাছাড়া সম্প্রতি জর্দান-তুর্কি সম্পর্কোন্নয়ন-প্রচেষ্টা (আমেরিকার বলয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে) আমেরিকা ও ইসরাইলকে বাদশাহ আবদুল্লাহকে আশ্বস্ত করতে বাধ্য করেছে।

অন্যদিকে আমেরিকার পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গির কারণে খোদ সৌদি আরব তাদের বিষয়ে জর্দানের উদ্বেগ দূরীকরণে এগিয়ে আসে এবং এ ধরনের চিন্তাকে অতিরঞ্জন হিসেবে আখ্যা দেয়। পত্রিকাটির মতে, সৌদি আরব এ ব্যাপারে সচেতন, জর্দানের বর্তমান প্রশাসনের স্থিতিশীলতা ইসরাইলের জন্য যতটুকু গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে তাদের জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ জর্দানের সঙ্গে সিরিয়ার সীমান্ত রয়েছে। আশঙ্কা করা হয়, সেখান থেকে চরমপন্থি দলগুলো সৌদি আরবে যেতে পারে।

মোটাদাগে বলা যেতে পারে, পবিত্র স্থানগুলোতে তত্ত্বাবধানের কর্তৃত্ব ধরে রাখার যে বিনিময় জর্দানকে দিতে হচ্ছে, তাহলো মসজিদে আকসাকে অপবিত্রকারী ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের ক্রমবর্ধমান বাইতুল মোকাদ্দাসে প্রবেশের বিষয়ে মুখে তালা লাগিয়ে রাখতে হবে। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের শেষের দিকে ইসরাইল ও জর্দানের মধ্যে সম্পাদিত এক চুক্তিতে বাইতুল মোকাদ্দাসে ইহুদিদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা হয়।

পত্রিকাটি আরও জানায়, সম্প্রতি সম্পাদিত এ নীরব চুক্তির পরই জর্দান ও সৌদি আরব উভয়েই মসজিদে আকসা ও পূর্ব জেরুজালেমে তুরস্কের হস্তক্ষেপ মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে রিয়াদ ও আম্মান ইসরাইলকে আহ্বান জানায়, যাতে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান কুদসের পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে ইসলামি বিশ্বে তার অবস্থানকে শক্তিশালী করতে না পারে। পত্রিকার মতে, এরই মধ্যে ইসরাইল পূর্ব কুদসে তুর্কি উপস্থিতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে। ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার কার্যালয় কুদস শহরে তুর্কি দাতব্য কার্যক্রম ও অনুপ্রবেশ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে।

হ লন্ডনভিত্তিক নিউ অ্যারাব অবলম্বনে

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর